September 29, 2024 12:57 pm

অবহেলিত চান্নার বিপ্লবীদের আশ্রম, খোঁজ নেয় না কেউ!

গলসি বার্তা ওয়েব ডেস্ক –  পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি ২ নম্বর ব্লকের চান্না গ্রামে বিপ্লবীদের আশ্রমটি আজ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খড়ি নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে চান্নার আশ্রম।

চান্নার এই আশ্রমটি গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি এই চান্না গ্রামেই এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আশ্রমটিকেই বাঁচিয়ে রাখার জন্যে “আশ্রম চান্না ট্রাষ্ট বোর্ড” নামে একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে। ওই বোর্ড সহ গ্রামের মানুষেরা চেষ্টা চালাচ্ছেন বিপ্লবীদের এই গোপন ডেরাটি পর্যটককেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার।

“আশ্রম চান্না ট্রাষ্ট বোর্ড” এর সম্পাদক সুব্রত শ্যাম বলেন, “আমরা চাই বিল্পবীদের ওই গোপন আস্থানাটিতে পর্যটক স্থান হয়ে উঠুক। আমাদের এই দাবি ইতিমধ্যেই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
কথিত রয়েছে, আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত, ভগৎ সিংহের ঘনিষ্ঠ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আশ্রমটি তৈরি করেন। ট্রাষ্ট বোর্ডের সভাপতি দুলাল মুখ্যোপাধ্যায় এক স্মরণিকাতে লিখেছেন, অরিবিন্দ ঘোষ, ভগৎ সিংহ,  বারীন্দ্রনাথ ঘোষ ও ভূপেন্দ্রনাথ দত্তদের মত ব্যক্তিত্বরা এই আশ্রমে আসতেন। এখানে থেকে  বিপ্লবী কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করতেন তাঁরা।
চান্নার বাসিন্দা তথা সহ সম্পাদক পান্নালাল সামান্ত বলেন, “পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যে এই স্থানটিতেই গোপন বৈঠক করতেন বিপ্লবীরা। কারণ পুলিশ হানা দিলেই খড়ি নদী পেরিয়ে খুব সহজেই গাঢাকা দেওয়া যেত। বট গাছের তলাতে চাটাই পেতেই বৈঠক হত।”

 

গলসির শিড়রাই গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লবী ফকির চন্দ্র রায়ও এই আশ্রমে আসতেন। তিনি যতীন্দ্রনাথবাবুর খুব কাছের মানুষ ছিলেন। আশ্রমে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর।
চান্না আশ্রম থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরেই ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। আশ্রমের সামনে রয়েছে চরকডাঙ্গা আদিবাসী পাড়া। গ্রামের মানুষের দাবি, যতীন্দ্রনাথবাবুই এই পরিবারগুলি দিয়ে গ্রামে আদিবাসী বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের আরও দাবি, চিন্ময় দেবী (হিরন্ময়ী দেবী) যতীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গিনী ছিলেন। যতীন্দ্রনাথবাবুর দুঃখে কষ্টে তাকে সাহায্য করতেন চিন্ময়দেবী।

 

কিন্তু ঐতিহ্যের এই আশ্রমটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ ধ্বংসের মুখে। যদিও গলসি-২ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে একটি অতিথিশালা তৈরি করা হয়েছে। আশ্রমের মধ্যে থাকা যতীন্দ্রনাথবাবুর টিনের চাল দেওয়া মাটির মূল ঘরটি ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। চিন্ময়দেবীর স্মৃতি মন্দিরটিও বেহাল অবস্থা। এলাকার মানুষের দাবী, এই আশ্রম লাগুয়া বহু জমি রয়েছে ট্রাস্টের হাতে। তাই আশ্রম ও বিপ্লবীদের স্মৃতি বাঁচাতেই গড়ে উঠুক পর্যটনকেন্দ্র।