গলসি বার্তা ওয়েবডেস্ক – দিনটা রবিবার। তবে এখানে তা ছুটির দিন নয়। সবাই যখন রবিবার থাকেন ছুটির মেজাজে তখন আর পাঁচটা দিনের মতোই সমান ব্যস্ততা চলে জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে। এদিন শিক্ষক পড়ুয়া কাজে ব্যস্ত থাকেন সকলেই।
কারণ এই স্কুলের ক্যালেন্ডারে রবিবার লাল কালির দাগ নেই। রাজ্যের বাকি সব স্কুলে রবিবার ছুটি থাকলেও ব্যতিক্রম শুধু জামালপুরের এই স্কুল। জন্ম থেকেই রবিবার কাজের দিন এই স্কুলে। ছুটি সোমবার। এই নিয়মের শুরুতে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস।
গত শতাব্দীর দুইয়ের দশক। স্বাধীনতা আন্দোলনকে ঘিরে দেশ উত্তাল। ইংরেজকে ভারত ছাড়া করতে জীবন পণ করেছেন ভারত মায়ের দামাল ছেলেরা। বিদেশি পন্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। স্বদেশী আন্দোলন চলছে। গান্ধিজী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। সেই সময় দেশ গড়ার কাজে মশগুল কিছু ব্যক্তি এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্কুল গড়ার কাজে হাত লাগালেন। নিজেদের দান করা জমিতে এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতায় গড়ে উঠলো জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়। ১৯২২ সালের ৫ জানুয়ারি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা হল।
ইংরেজদের কোনও সহযোগিতা তো তাঁরা নিলেনই না, শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থাও করলেন নিজেরাই। যেহেতু সানডে অর্থাৎ রবিবার ছুটির দিন তাই ইংরেজদের সেই নিয়মের বিরোধিতা করে সেই দিন স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হল। ছুটির দিন ঠিক হল সোমবার। প্রায় একশ বছর ধরে সেই ধারা চলে আসছে এই স্কুলে। সেই নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন ছাত্রছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকা সকলেই।
শিক্ষক সমীর ঘোষাল বললেন, এমন একটা স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। অন্যান্য শিক্ষকরাও রবিবার স্কুলে আসতে কোনও রকম দ্বিধা বোধ করেন না। পড়ুয়াদের বক্তব্য, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের স্কুলের ইতিহাস। অন্যরা যখন রবিবার ছুটি কাটায় আমরা তখন স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হই। রবিবার স্কুল খোলা রাখার নজির অন্য কোথাও নেই।
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বলছেন, সোমবার ছুটি থাকায় আমরা সেদিন ব্যাংক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজনের বিভিন্ন কাজ সেরে নিতে পারি। রবিবার সব জায়গায় ছুটি থাকায় তা সম্ভব হতো না। আজকের দিনে এটা বাড়তি সুবিধা বলাই যায়