PB News Desk: মোটামুটি এখন একই রকম রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)৷ তবে আশার কথা, কড়া অ্যান্টিবায়োটিক ডোজের জন্য গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একবারও জ্বর আসেনি বুদ্ধদেবের৷ জানালেন, বুদ্ধদেবের চিকিৎসায় গড়া মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী।
বুদ্ধদেব বাবুকে যে সময় হাতপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেই সময় তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বেশ অনেকটাই কমে গিয়েছিল বলে সূত্রের খবর৷ তাঁর চিকিৎসায় দ্রুতই তৈরি হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড৷ ওই দলে রয়েছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী (মেডিসিন), সৌতিক পাণ্ডা (ক্রিটিক্যাল কেয়ার), সুস্মিতা দেবনাথ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার), সরোজ মণ্ডল (হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ), অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায় (ইন্টারনাল মেডিসিন এবং পালমনোলজি), ধ্রুব ভট্টাচার্য (ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার), আশিস পাত্র (অ্যানাস্থেশিয়া), দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায় (ইনফেকশাস ডিজ়িজ স্পেশালিস্ট), সেমন্তী চক্রবর্তী (এন্ডোক্রিনোলজি), সোমনাথ মাইতি (জেনারেল মেডিসিন), সপ্তর্ষি বসু (ফিজিশিয়ান এবং সুপার)।
এদিন রাতে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে আসেন কৌশিক চক্রবর্তী। হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মোটামুটি এখন একই রকম রয়েছেন। ভাল খবর হল, কাল এখানে আসার পরে একবার জ্বর এসেছিল৷ কিন্তু তার পর থেকে ২৪ ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে, ওঁর কিন্তু আর জ্বর আসেনি। এর ফলে আমরা নিশ্চয়ই আশাবাদী যে ওঁর ইনফেকশনটা কমছে।’’
তবে চিকিৎসক জানান, ভেন্টিলেটরস প্যারামিটারস এদিন নতুন করে কিছু কমানো হয়নি। আগামিকাল, সোমবার সকালে একটি সিটি স্ক্যান করা কথা, পাশাপাশি ব্লাড টেস্টও হবে বুদ্ধদেবের (Buddhadeb Bhattacharjee) ৷ তারপরেই, চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন যে, ওঁর ভেন্টিলেটর সাপোর্ট কমানো যাবে কি না৷ সে ক্ষেত্রে, রিপোর্টগুলো তাঁদের গাইড করবে বলে জানান চিকিৎসক।
চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, ‘(উনি) ক্রিটিকাল কিন্তু স্থিতিশীল। বাকিটা আমরা কালকে আফটার দা রিপোর্ট একটা ডিসিশন নিতে পারব ভেন্টিলেটর সাপোর্ট কমানো যাবে কি না৷ রিপোর্টগুলো যদি গন্ডগোলের আসে, তবে আমাদের আরও ভাবতে হবে অ্যান্টিবায়োটিক বাড়ানো সাপোর্ট বাড়ানো ইত্যাদি। জ্বরটা যেহেতু গতকালের থেকে এখনও পর্যন্ত নেই, আমরা আশাবাদী যে রিপোর্টগুলো নিশ্চয়ই ভাল আসবে।’’
উনি জানান, ‘‘পজিটিভ নেগেটিভ অনেকগুলো ব্যাপার নিয়ে চলছি আমরা। এর মধ্যে যতক্ষণ না আমরা সিটি স্ক্যান অফ ব্লাড রিপোর্ট পাচ্ছি, এর মধ্যে আমরা ভেন্টিলেটর খোলার চেষ্টা ভেন্টিলেটর সাপোর্ট কমানোর চেষ্টা করব না, করতে পারব না। রিপোর্টগুলো এলে তারপরে আমরা এগোতে পারব। সিটি স্ক্যান দেখে বুঝতে পারব ফুসফুসের ভিতরে কী অবস্থা।
এগুলো দেখে আমরা বুঝতে পারব ইনফেকশন সত্যিই কমল কি না। উপরে উপরে ক্লিনিক্যালি দেখে পেশেন্টকে স্থিতিশীল লাগছে, যেহেতু জ্বরটা চলে গেছে। হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক আমরা সন্ধ্যে থেকে শুরু করার পরে একবারও জ্বর আসেনি। এটাতে আমরা আশাবাদী হতেই পারি৷ আশা করি, এই অ্যন্টিবায়োটিকটা কাজ করছে।’’
গত দু’তিন দিন ধরে প্রায় কিছুই খেতে পারছিলেন না বুদ্ধদেববাবু৷ গত শনিবার তাঁর শ্বাসকষ্ট আরও বাড়ে৷ এদিন বিকেলে সাড়ে ৪টে নাগাদ তাই তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করানো হয় উডল্যান্ডস হাসপাতালে৷ হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, বুদ্ধদেবের শ্বাসনালীতে (লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট) সংক্রমণ রয়েছে এবং ‘টাইপ-২ রেসপিরেটরি ফেলিওর’ হয়েছে। এদিন ওই বোর্ডে আরও দুই চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সেমন্তী চক্রবর্তী (এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)৷
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার তাঁর সিটি স্ক্যান করানোর কথা থাকলেও এদিন সেই ঝুঁকি নেননি চিকিৎসকেরা৷ সোমবার তাঁর সিটি থোরাক্স ( CT THORAX) করা হবে৷ এর ফলে, কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি থোরাক্স, যার মাধ্যমে স্ক্যান করে ফুসফুসের রক্ত চলাচল এবং সংক্রমণের মাত্রা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যাবে৷
রবিবার তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, সূর্যকান্ত মিশ্র৷ মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে চিকিৎসক সূর্যকান্তও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) এক্স-রে রিপোর্ট মোটেই সন্তোষজনক ছিল না বলে জানান চিকিৎসকেরা৷ তাঁর ফুসফুসের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশই সংক্রমিত৷ বিশেষ প্রভাব পড়েছে বাঁ দিকের ফুসফুসে৷ রক্তপরীক্ষায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শরীরের মাল্টি ড্রাগ রেসিসট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ মিলেছে৷